অনলাইন ডেস্ক ::
ঘুম থেকে উঠেই একটানা ফোনে কথা বলতে থাকা, সকালে স্বামীকে চা বানিয়ে না দেওয়া এবং ফোনের কল লিস্ট স্বামীকে দেখতে না দেওয়ায় চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমুকে নির্মমভাবে খুন করেন তার স্বামী নোবেল।
এ ঘটনায় নোবেলকে শুরু থেকেই সহযোগিতা করে তার বাল্যবন্ধু এস এম ওয়াই আব্দুল্লাহ ফরহাদ (৪৭)। রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদে এমনটাই জানিয়েছেন ফরহাদ আর নোবেল।
শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা জেলার অতিরিক্তি পুলিশ সুপার (অপরাধ দক্ষিন) মো. হুমায়ূন কবীর।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নোবেলের বন্ধু ফরহাদ সরাসরি খুনের সাথে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। তিন দিনের রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনেই হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন নোবেল ও ফরাহাদ।
পুলিশ জানায়, ঘটনার দিন সকালে নোবেলের কাছে দুই হাজার টাকা ধার নিতে রাজধানীর গ্রিন রোডের বাসায় যান ফরহাদ। এসময় নোবেল ও শিমুর মধ্যে ঝগড়া চলছিল। নোবেলের অনুরোধে শিমুকে জাপটে ধরে ফরহাদ আর নোবেল গলা টিপে হত্যা করে শিমুকে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহাবউদ্দিন কবীর বলেন, ঘটনার দিন সকালে নোবেলকে চা বানিয়ে না দিয়ে শিমু মোবাইল ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলছিল। এসময় নোবেল শিমুর কাছে মোবাইল ফোনটি চেয়ে বলে, কার সঙ্গে কথা বলছ, ফোনটা দাও। কিন্তু শিমু দেয়নি। নোবেল ফোনটি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এসময় ড্রয়িং রুমে বসে থাকা ফরহাদ বেডরুমে গিয়ে তাদের থামানোর চেষ্টা করে। ঠিক তখনই শিমু নোবেলকে ধাক্কা দেয়। এসময় নোবেল ফরহাদকে বলে, ‘দোস্ত তুমি ধরো।’ ফরহাদ তখন শিমুকে ধরে। আর নোবেল শিমুকে হত্যা করে।
শিমু কার সঙ্গে ফোনে কথা বলছিল সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা এখনই বলা যাচ্ছে না। রাতে তাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা দুজনে (শিমু ও নোবেল) লেট নাইটে বাসায় আসেন। রাতে তাদের মধ্যে ঝামেলা হওয়ার কোনো তথ্য এখনো তদন্তে পাওয়া যায়নি। তবে আমরা জানতে পেরেছি শিমুর রাতে নিদ্রাহীনতার সমস্যা আছে, সহজে ঘুম আসে না। এজন্য নিয়মিত ঘুমের টেবলেট খেয়ে ঘুমায়। ঘটনার আগের রাতেও সে ঘুমের টেবলেট খেয়ে ঘুমায়। তবে সকালে শিমু নোবেলের আগে ঘুম থেকে ওঠে।
এর আগে ফরহাদ শুধু লাশ গুম করার কাজে নবেলকে সহযোগিতা করেছে বলে জানিয়েছিল পুলিশ। ফরহাদকে নিয়ে দুই ধরনের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের ঢাকা জেলার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহাবউদ্দিন কবীর গতকাল শুক্রবার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পারি ফরহাদ লাশ গুমে সহায়তা করেছে। মূলত ফরহাদ যেহেতু সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে সেহেতু নোবেল বন্ধু ফরহাদকে বাঁচাতে দায়টা নিজের ঘাড়ে নেয়। পরে তাদের মোবাইল রেকর্ড, ঘটনাস্থলের প্রমাণ ও তথ্য প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা জানতে পেরেছি ফরহাদও হত্যায় অংশ নেয়। প্রথমে তাদের দুজনকে আলাদা ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করি। পরে একসঙ্গে সামনাসামনি করে ক্রস এক্সজামিনেশন করি। তখন নোবেল জানিয়েছে, এটা (হত্যা) প্রথমে একা চেষ্টা করেছি কিন্তু পারি নাই। পরে ফরহাদ আমাকে সহায়তা করেছে। দুজন মিলেই কাজটা (হত্যা) করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার ঢাকার কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ব্রিজের কাছে আলিয়াপুর এলাকায় রাস্তার পাশে ঝোপের ভেতর থেকে অজ্ঞাত এক নারীর লাশ উদ্ধার করে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ। পরে পুলিশ জানতে পারে লাশটি চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমুর। হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার দায়ে শিমুর স্বামী নোবেল ও নোবেলের বন্ধু ফরহাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পাঠকের মতামত: